ফলে অনেকেই পাট জাগ দেওয়ার মতো পর্য্যাপ্ত পানির জলাশয় না পেয়ে জমিতেই ফেলে রেখেছেন কাটা পাট। এতে তীব্র রোদে কাটা পাট শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ সামান্য পানি আছে এমন লোকের ক্ষুদ্র জলাশয় ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। কিংবা অনেক কৃষককে পাট জাগ দিতে যেতে হচ্ছে দূরের কোন জলাশয়ে। আবার কেউ তাও পাচ্ছেন না। এতে করে পানির সংকটে পাট জাগ দিতে না পেরে বেশির ভাগ কৃষক চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। পাশাপাশি পরিবহন, জলাশয় ভাড়া, কৃষি শ্রমিকের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক গুনে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিনও হচ্ছেন পাটচাষী কৃষকেরা।
জানা গেছে, এবার কৃষকেরা চলতি বছর তোশা-৮, রবি-১, মহারাষ্ট্রসহ নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল পাটের আবাদ করেছেন। এলাকায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে সোনালী আঁশ পাট চাষ হয়েছে। সেই সাথে এ বছর পাটের ফলনও হচ্ছে ভালো। বর্তমানে প্রতি বিঘায় প্রায় ৬ থেকে ৮ মন পাট উৎপাদন হচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক কৃষক জানিয়েছেন। আর বর্তমানে প্রায় সব এলাকায় চলছে পাট কাটার ভরা মৌসুম। কিন্তু বাঁধ সেঁধেছে পাট জাগ দেবার মত পর্য্যাপ্ত পানির সংকট। কেননা চলনবিলের বেশির ভাগ ডোবা, নালা, খাল, বিল এখন পানির অভাবে যেন খাঁ-খাঁ করছে।
উপজেলার নওগাঁ এলাকার কৃষক বরাত আলী বলেন, পাট পানিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন ডুবিয়ে রেখে (জাগ দিয়ে) তবেই আঁশ ছাড়ানোর উপযোগী হয়। তারপর আঁশ ছাড়ানো শেষ হলে তা ভাল করে ধুয়ে রোদে শুকাতে হয়। কিন্তু এ বছর চলনবিল এলাকায় বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির পরিমাণ গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কম। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় ডোবা, নালা, খাল বিলে পানি নেই বললেই চলে। আবার কিছু এলাকায় সামান্য পানি থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অল্প। হাজার হাজার পুকুর থাকলেও বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করায় এ সকল পুকুরে পাট জাগ দেবার জো নেই। এ কারণে আমরা পাট কাটলেও পানির অভাবে জাগ দিতে পারছি না।
বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের আরেক কৃষক মো. বক্কার আলী জানান, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের আবাদও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ডোবা, নালা, খাল বিল আছে তাতে পাট জাগ দেবার মত পানি নেই। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের এক ব্যাক্তির ক্ষুদ্র একটা জলাশয় ৩ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে দুই বিঘা জমির কাটা পাট জাগ দিচ্ছি। আর এ অবস্থা শুধু আমার নয় এলাকার অনেক পাটচাষী কৃষকের।
একই গ্রামের আরেক কৃষক মো. ইজ্জত আলী বলেন, একটি জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। তা সে পাট কেটেছিও। আর জমির পাশে আঞ্চলিক সড়কের খালে কিছু জায়গায় হাটু পানি ছিল। আর সেই হাঁটু পানিতেই জমির অর্ধেক পরিমান পাট জাগ দিলেও আর পানি না পেয়ে অর্ধেক পাট জমিতেই ফেলে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, তারপরও সমস্যার এখানেই শেষ নয়। কেননা আঁশ চাড়ানোর পর ভালো করে পাট ধোয়ার মত পানি এ খালে নেই। তাই আঁশ ছড়ানো পাট ভালো করে ধুতে না পারলে তার রং ও ভালো হবে না।
পাশাপাশি সগুনা ইউনিয়ন এলাকার কৃষক জমশেদ আলী বলেন, জমির ধারে কাছে পাট জাগ দেবার মত পানি না পেয়ে ৬০০ টাকা ভ্যান ভাড়া দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে একটি জলাশয়ে এক বিঘা জমির পাট জাগ দিতে বাধ্য হই। কিন্তু এতেও শান্তি নাই। কারণ বদ্ধ এবং অল্প পানিতে পাট ধোয়ার কাজ করা কৃষি শ্রমিক নানা অজুহাতে পারিশ্রমিক বেশি চাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। আর কষ্ট করে হলেও পাটচাষী কৃষকদের তাঁদের উৎপাদিত সোনালী আঁশ পাট জমিতে ফেলে না রেখে আশে-পাশের জলাশয়ে জাগ দেবার পরামর্শ দেন।